Top Softwares
হাদিসের গল্প
1.ছুমামাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তম আচরণের অনুপম নিদর্শন
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_69.html
2.মদীনায় হিজরতের পথে
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_23.html
3.মুহাম্মাদ (সাঃ)-ই একমাত্র শাফা‘আঁতকারী
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_87.html
4.আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর একটি ঘটনা এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_96.html
5.পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবক
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_3.html
6.যমযম কূপ ও কাবা ঘর নির্মাণের ঘটনা
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_34.html
7.ঈমানদার যুবক ও আছহাবুল উখদূদের কাহিনী
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_18.html
8.আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর একটি ঘটনা এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_96.html
9.কা‘ব বিন মালিক (রাঃ)-এর তওবা
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_16.html
10.মুমিনের কারামত
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_25.html
11.কা‘ব বিন আশরাফের মৃত্যুকাহিনী
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_51.html
12.দোলনায় কথা বলা তিন শিশু
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_71.html
13.কুষ্ঠরোগী, অন্ধ ও টেকোর কাহিনী
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_42.html
14.রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর দরবারে
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_77.html
15.সুলায়মান (আঃ)-এর হিকমতপূর্ণ বিচার
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_46.html
16.আবূ ত্বালিবের মৃত্যুর ঘটনা
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_15.html
17.ইবরাহীম (আঃ), সারা ও অত্যাচারী বাদশাহ
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post_26.html
18.খিযির ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী
Link: https://new-blogging-world.blogspot.com/2020/07/blog-post.html
হাদিসের গল্প – ছুমামাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তম আচরণের অনুপম নিদর্শন
আবু হুরায়রা (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (সাঃ) নাজদের দিকে কিছু অশ্বারোহী (সৈন্য) পাঠালেন। তারা বনী হানীফা গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে ধরে আনল। তার নাম ছুমামাহ বিন উছাল।সে ইয়ামামাবাসীদের সরদার। তারা তাকে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল।
রাসূল (সাঃ) তার কাছে আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তুমি কি মনে করছ’? সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমার ধারণা ভালই। যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে অবশ্যই আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি মাল চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা আদায় করা হবে’। তার কথা শুনে রাসূল (সাঃ) তাকে (সেদিনের মত তার নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন।
অতঃপর পরের দিন নবী করীম (সাঃ) তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে’? সে জবাবে বলল, ‘তাই মনে হচ্ছে, যা আমি আপনাকে পূর্বেই বলেছি। যদি আপনি আমার প্রতি মেহেরবানী করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর মেহেরবানী করবেন। আর যদি আপনি হত্যা করেন, তাহ’লে একজন খুনী লোককে হত্যা করবেন। আর যদি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে’।
রাসূল (সাঃ) আজও তাকে (নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন। এভাবে রাসূল (সাঃ) তৃতীয় দিনে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে’? জওয়াবে সে বলল, ‘আমার তাই মনে হচ্ছে, যা আমি পূর্বেই আপনাকে বলেছি।যদি আপনি আমার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুকম্পা করবেন। আর যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যতটা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে’।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তোমরা ছুমামাহকে ছেড়ে দাও’! (তাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল)। অতঃপর সে মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করল। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বলে উঠল:
‘আশহাদু আললা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’।
‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্ কসম! পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণ্য ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে গেছে।আল্লাহ্ কসম! (ইতিপূর্বে) আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহ্ কসম! (এর আগে) আপনার শহরের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না।কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেছে।আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় ধরে এনেছে, যখন আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করতে হুকুম দিচ্ছেন?
রাসূল (সাঃ) তাকে সুসংবাদ শুনালেন এবং ওমরাহ পালনের আদেশ করলেন।এরপর যখন তিনি মক্কায় পৌছলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি না কি বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি জওয়াবে বললেন, ‘তা হবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি।আর আল্লাহ্ কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হ’তে আর একটি গমের দানাও আসবে না’
[বুখারী হা/৪৬২, মুসলিম হা/১৭৬৪, আলবানী, মিশকাত হা/৩৯৬৪, ‘জিহাদ’অধ্যায়, ‘যুদ্ধবন্দীদের বিধান’অনুচেছদ]।
শিক্ষা:
উত্তম আচরণ ও ক্ষমার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। এজন্যই বলা হয়, ক্ষমাই উত্তম প্রতিশোধ। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘মন্দকে ভাল দ্বারা মোকাবেলা কর, ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে’ [হা-মীম সাজদাহ ৩৪]
Source: quraneralo.com
হাদিসের গল্প – মদীনায় হিজরতের পথে
বারা ইবনু আযেব (রা:) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, একদা আযেব (রা:) আবূ বকর (রা:)-কে বললেন, হে আবূ বকর! যে রাতে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে (হিজরতের উদ্দেশ্যে) সফর করেছিলেন, সে রাতে আপনারা কি করেছিলেন আমাকে অবহিত করুন। আবূ বকর (রা:) বললেন, আমরা একদিন এক রাত পথ চলার পর যখন দ্বিপ্রহর হ’ল এবং পথ-ঘাট এমন শূন্য হ’ল যে, কাউকেও চোখে পড়ছিল না। এমন সময় একটি লম্বা পাথর আমাদের নযরে আসল। তার পাশে যথেষ্ট ছায়া ছিল। সেখানে রোদ পড়ত না। আমরা সেখানে অবতরণ করলাম এবং আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য কিছু জায়গা সমান করলাম, যাতে তিনি শয়ন করতে পারেন।
এরপর একটি চাদর বিছিয়ে দিয়ে তাঁকে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি ঘুমান। আমি আপনাকে পাহারা দিচ্ছি ও সবদিক খেয়াল রাখছি। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি বের হয়ে চতুর্দিক থেকে তাকে পাহারা দিতে থাকলাম। তাঁকে পাহারা দেওয়ার সময় হঠাৎ দেখি একজন মেষচারক আমাদের ন্যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাথরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বকরীগুলিতে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি কি তা (আমাদের জন্য) দোহন করবে? সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর সে একটি বকরী ধরে এনে একটি পাত্রে সামান্য দুধ দোহন করল। আমার নিকট একটি পাত্র ছিল, যা আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর জন্য এনেছিলাম, যেন তা দিয়ে তিনি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করতে এবং ওযূ করতে পারেন। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর নিকটে এসে তাঁকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পরে তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় পেলাম। তখন দুধ ঠান্ডা করার জন্য তাতে পানি মিশালাম, ফলে দুধের নিম্নভাগ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! পান করুন। তিনি পান করলেন। এতে আমি খুব সন্তুষ্ট হলাম।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় হয়েছে কি ? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। আবূ বকর (রা:) বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর আমরা রওয়ানা হলাম। এদিকে সুরাকা ইবনু মালেক আমাদের অনুসরণ করছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আমাদের নিকটে শত্রু এসে পড়েছে। তিনি বললেন,চিন্তা কর না, আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ [তওবা ৪০]
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সুরাকার জন্য বদদোআ করলেন, ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে শক্ত মাটিতে পেট পর্যন্ত দেবে গেল। তখন সুরাকা বলল, ‘আমার বিশ্বাস তোমরা আমার জন্য বদদোআ করেছ। তোমরা আল্লাহ্র নিকট আমার জন্য দোআ কর, আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্যকারী হবেন। আমি তোমাদের নিকট অঙ্গীকার করছি যে, তোমাদের অন্বেষণকারীদেরকে (শত্রুদের) আমি ফিরিয়ে দিব। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জন্য দোআ করলে সে মুক্তি পায়। অতঃপর যার সাথেই সুরাকার দেখা হয়েছে, তাকেই সে বলেছে, ‘আমি তোমাদের কাজ সেরে এসেছি। এদিকে তারা কেউ নেই। এমনিভাবে যার সাথেই তার সাক্ষাৎ হত, তাকেই সে ফিরিয়ে দিত ।
[বুখারী হা/৩৬১৫, মুসলিম হা/২০০৯, মিশকাত হা/৫৮৬৯ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’অধ্যায়; ‘মুজিযা’অনুচেছদ ]
শিক্ষা:
(১) সর্বক্ষেত্রে যথাযথভাবে নেতার আনুগত্য করা। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকা।
(২) বিশেষ ক্ষেত্রে মহৎ ব্যক্তিগণকে ঘুম থেকে না ডাকা বিচক্ষণতার পরিচয়।
(৩) যে কোন বিপদে একমাত্র মহান আল্লাহ্র প্রতি অবিচল আস্থা রাখা।
(৪) আল্লাহ্ তাআলা শত্রু বা যালেমদেরকে অনেক সময় প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে থাকেন।
Source: quraneralo.com
হাদিসের গল্প – মুহাম্মাদ (সাঃ)-ই একমাত্র শাফা‘আঁতকারী
হযরত আনাস (রা:) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনগণকে (হাশরের ময়দানে স্ব স্ব অপরাধের কারণে) বন্দী রাখা হবে। তাতে তারা অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়বে এবং বলবে, ‘যদি আমরা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কারো মাধ্যমে সুপারিশ কামনা করি, যিনি আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে স্বস্তি দিবেন ।’সেই লক্ষ্যে তারা আদম (আঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘আপনি মানবজাতির পিতা আদম, আপনাকে আল্লাহ্ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, জান্নাতে বসবাস করিয়েছেন, ফেরেশতা মন্ডলীকে দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছিলেন এবং তিনিই যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এই কষ্টদায়ক স্থান হ’তে মুক্ত করে প্রশান্তি দান করেন ।’তখন আদম (আঃ) বলবেন, ‘আমি তোমাদের এই কাজের মোটেই উপযুক্ত নই’।
নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তিনি গাছ হ’তে ফল খাওয়ার অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা হ’তে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল। [আদম (আঃ) বলবেন] ‘বরং তোমরা মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার প্রেরিত সর্বপ্রথম নবী নূহ (আঃ)-এর নিকট যাও’। তারা নূহ (আঃ)-এর কাছে গেলে তিনি তাদেরকে বলবেন, ‘আমি তোমাদের এ কাজের জন্য একেবারেই যোগ্য নই ।’ সাথে সাথে তিনি তাঁর ঐ অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা অজ্ঞতাবশত: নিজের (অবাধ্য) ছেলেকে পানিতে না ডুবানোর জন্য আল্লাহ্ কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (তিনি বলবেন) ‘বরং তোমরা আল্লাহ্ খলীল হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাও’।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, এবার তারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকটে যাবে। তখন তিনি বলবেন , ‘আমি তোমাদের এ কাজের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না ।’ সাথে সাথে তাঁর তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ্র এমন এক বান্দা, যাকে আল্লাহ্ তাওরাত দান করেছেন, তার সাথে বাক্যালাপ করেছেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেছেন’।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তখন তারা সকলে হযরত মূসা (আঃ) এর নিকটে আসলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে অপারগ।’তখন তিনি সেই প্রাণনাশের অপরাধের কথা স্মরণ করবেন, যা তাঁর হাতে সংঘটিত হয়েছিল এবং বলবেন, ‘বরং তোমরা আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর মনোনীত রাসূল, তাঁর কালেমা ও রূহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে যাও।’নবী করীম (সাঃ) বলেন, তখন তারা সবাই হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, ‘আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই।বরং তোমরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে যাও।তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার এমন এক বান্দা, যার আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তারা আমার কাছে আসবে।আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব।অতঃপর আমাকে তাঁর নিকট যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্ আমাকে যতক্ষণ চাইবেন সিজদা অবস্থায় রাখবেন’।অতঃপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।আর যা বলার বল, তোমর কথা শুনা হবে। শাফা‘আত কর, কবুল করা হবে।তুমি চাও, তোমাকে দেওয়া হবে ।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।তখন আমি আল্লাহ্র দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্ধারিত সীমার লোকদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।তারপর আমি পুনরায় ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাযির হওয়ার জন্য আল্লাহ্ কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব এবং আল্লাহ্ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদা অবস্থায় থাকতে দিবেন ।’ তারপর আল্লাহ্ বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর যা বলার বল, তোমার কথা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। তুমি প্রার্থনা কর, যা প্রার্থনা করবে তা দেওয়া হবে’।
রাসূল (সাঃ) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা ও গুণকীর্তন বর্ণনা করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি শাফা‘আত করব। তবে এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। তখন আমি আমার রবের দরবার হ’তে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলিকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।অতঃপর তৃতীয়বার ফিরে আসব এবং আমার প্রতিপালক আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব।আমাকে তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই সিজদায় পড়ে যাব।আল্লাহ্ যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে সিজদা অবস্থায় য় রাখবেন ।’ তারপর বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।তুমি যা বলবে তা শুনা হবে, সুপারিশ কর, কবুল করা হবে।প্রার্থনা কর, তা দেওয়া হবে।’রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার রবের এমন হামদ ও ছানা বর্ণনা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন।’ নবী করীম (সাঃ) বলেন, ‘তারপর আমি শাফা‘আত করব।এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিবেন। তখন আমি সেই দরবার থেকে বের হয়ে আসব এবং তাদেরকে জাহান্নাম হ’তে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব’।
অবশেষে কুরআন যাদেরকে আটকিয়ে রাখবে (অর্থাৎ যাদের জন্য কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়ে গেছে) তারা ব্যতীত আর কেউ জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না। বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত আনাস (রা:) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরআনের এই আয়াতটি ‘আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক অচিরেই আপনাকে ‘মাকামে মাহমূদে’ পৌঁছিয়ে দেবেন’ [বনী ইসরাঈল ৭৯] তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, এটাই সেই ‘মাকামে মাহমূদ’ যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের নবীকে দেওয়া হয়েছে
[ছহীহ বুখারী হা/৭৪৪০ তাওহীদ’অধ্যায়, অনুচেছদ-২৪, মিশকাত হা/৫৫৭২ ‘কিয়ামতের অবস্থা ও সৃষ্টির সূচনা’অধ্যায়, ‘হাওযে কাওছার ও শাফা‘আত’অনুচেছদ]
শিক্ষা:
(১) সকল নবী-রাসলের উপর মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব।
(২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শাফা‘আতে পরকালে কিছু জাহান্নামীকে আল্লাহ্ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর এমন একটি দো‘আ রয়েছে, যা (আল্লাহ্র্ নিকট) গৃহীত হয়, আর নবী সে দো‘আ করে থাকেন।আমার ইচ্ছা, আমি আমার সে দো‘আর অধিকার আখেরাতে আমার উম্মতের শাফা‘আতের জন্য মুলতবি রাখি’ (বুখারী হা/৬৩০৪, ‘দো‘আ সমূহ’অধ্যায়, অনুচেছদ-১)।
(৩) কোন পীর-ওলী পরকালে শাফা‘আতের অধিকার রাখবেন না।
Source: quraneralo.com
আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর একটি ঘটনা এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা
আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনাটি মোটামুটি আমরা সবাই জানি, কিন্তু ঘটনাটির মাঝে একটি গুরত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ, সেই বিষয়েই এখানে আলোকপাত করব। আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
রাসূল (ﷺ) মিরাজ থেকে ফিরে এসেছেন। সকালবেলা তিনি যখন মক্কার কুরাইশদের মিরাজের ঘটনাটি বললেন তখন কুফ্ফার সম্প্রদায় হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয়েছিল। মক্কার এই কুরাইশ সম্প্রদায়ের কুফ্ফারগণ ছিলেন অনেকটা বস্তুবাদি। যা দেখা, যায় ধরা যায়, ছোয়া যায় শুধু তাই তারা আমলে নিত। রাসূল (ﷺ) এর মিরাজের ঘটনাটিকে তারা একটা হাতিয়ার হিসেবে ধরে নিল আর এর মাধ্যমে মিরাজের ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইল। কুফ্ফার সম্প্রদায়ের কিছু লোক আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর নিকট গেলেন। তিনি বাণিজ্য থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছেন, তাই তখনও রাসূল (ﷺ) এর সাথে দেখা করতে পারেননি। কুফ্ফার সম্প্রদায় তাকে বলল, শুনেছ কি তোমার সঙ্গী কি সব বলা শুরু করেছে? সে বলছে, সে নাকি এক রাতের মধ্যে মক্কা থেকে বাইতুল মাকদাস(জেরুজালেম) যেয়ে আবার মক্কায় ফিরে এসেছে।
আবু বকর (রা:) বললেন, এই কথাগুলো কি তিনি বলেছেন? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ। এরপর আবু বকর (রা:) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন। কুফফার সম্প্রদায়ের বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল। তারা বলল, তুমি বিশ্বাস কর সে বৃহত্তর সিরিয়ায় যেয়ে আবার এক রাতের মধ্যে ফিরে এসেছে! আবু বকর (রা:) বললেন, আমি তাকে বিশ্বাস করি বরং এর চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি ঐসব বিষয়ে যেগুলো তাঁর নিকট ওহী হিসেবে এসেছে। মোটামুটি এই ঘটনাটুকু আমরা সবাই জানি, কোন বইতে পড়ে কিংবা কারো নিকট থেকে এই ঘটনা শুনে আমরা পুলকিত হই কিন্তু এই ঘটনার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হিকমা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে।
কুফ্ফার সম্প্রদায় যখন আবু বকর (রা:) কে রাসূল (ﷺ) এর মিরাজ সম্পর্কিত কথাটি বলল তখন, আবু বকর (রা:) এর যদি দূর্বল ঈমান থাকত তাহলে তিনি বলতেন, না এই ঘটনাটি সত্য নয় অথবা, আবু বকর (রা:) যদি এমন হতেন যাকে খুব সহজেই কথার চাতুরী দ্বারা অভিভূত করা যায় তাহলে তিনি বলতেন ঘটনাটি সত্য। আবু বকর (রা:) চমৎকারভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, মাশাল্লাহ। তিনি ঘটনাটি শুনেছেন কুফ্ফারদের নিকট থেকে আর তাই আবু বকর (রা:) বললেন, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন।
এর দুইটি অংশ রয়েছে, প্রথমত, ‘যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন’ – হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এই পদ্ধতীতে কাজ করেন, অর্থাৎ যদি উৎস সত্যিই রাসূল (ﷺ) এর নিকট থেকে আসে- দ্বিতীয়ত, তাহলে তা সত্য। সেটা হচ্ছে ওহী, আল্লাহর নিকট থেকে রাসূল (ﷺ) এর উপর নাযিলকৃত। অর্থাৎ সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, সেই অনুযায়ী কর্তব্য পালন করা ঈমানী দায়িত্ব, কারণ সেটা ওহী। এমন কথা বলা যাবে না যে, এটা তো আমার যুক্তিতে টিকল না বা আমার বাপ-দাদাদের কখনও এমন কিছু বলতে বা করতে দেখিনি কিংবা আমার মাযহাবে এমনটি সমর্থন করে না’।
আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটাই, রাসূল (ﷺ) এর কথা সহীহভাবে আমাদের নিকট পৌছালে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিতে হবে, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর্ম পালন করতে হবে। সেটা আমার নিকট যুক্তিতে টিকুক আর না টিকুক, আমার চারপাশে লোকজন সেটা মানুক আর না মানুক আমাকে রাসূল (ﷺ) এর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতেই হবে এবং তার যথাসাধ্য অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীদের মতো করে দ্বীন ইসলামকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।
আমীন!!
Source: quraneralo.com